bengal football

ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্য ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে

দিবাস্বপ্ন দেখে কারা যেন বলেছিলেন অলিম্পিক গেমসে ভারতীয় ফুটবল দল মাঠে নামছে৷ সবাই তো হতবাক৷ কোনও অঘটন ঘটে গেল নাকি! চোখ খুলতেই দেখা ভারতীয় দলের কী করুণ অবস্থা৷ ধারেকাছে দেখা নেই৷ ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের অবস্থান এখন ১৩৪ নম্বরে৷ ১৩৩ থেকে নামতে নামতে আরও এক ধাপ নীচে নেমে যেতে হল৷ সেই ভারতীয় দল অলিম্পিক খেলা যেন বামনের চাঁদে‍ অভিযানের মতন৷

সাত বছর আগে ভারতের জায়গা ছিল ৯৯তম স্থানে৷ আর সেই সময় ভারত থেকে এক ধাপ এগিয়ে ছিল উজবেকিস্তান৷ আর সেই সময়ে উজবেকিস্তান ফুটবল সংস্থায় প্রবল অশান্তির
কালো মেঘ জমাট বেঁধেছিল৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই উজবেকিস্তানের ফুটবলের চেহারাটা আমুল পরিবর্তন হয়ে যায়৷ ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের জায়গাটা শুধু বদলে যায়নি‍— তারা সাহসী ভূমিকা দেখিয়ে প্রথমবারের জন্যে অলিম্পিক গেমস ফুটবলে খেলার জন্যে ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে৷ তাহলে আমাদের দিবাস্বপ্ন দেখা ছাড়া আর অন্য কোনও কিছু সার্থক হতে পারে না৷ অন্যদিকে ছয় বছর আগে ফিফা ক্রমতালিকায় ৯৯তম স্থানে থাকা জর্ডন এবারে অলিম্পিক গেমস ফুটবলে খেলতে যাচ্ছে৷ আর ভারত ক্রমান্বয়ে তলানিতে যাওয়ার চেষ্টা করেই চলেছে৷ ভারতের চেয়ে দুর্বল দেশগুলির কাছে যেভাবে হেরে চলেছে, সেখানে নতুন করে কোনও ভাবনার অবকাশ থাকে না৷

ব্যর্থতার মালা নিয়ে কখনওই ভারত এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারে না৷ তাইল্যান্ড ও হংকংয়ের মতো দলের কাছে হারতে হচ্ছে৷ ফেডারেশনের কর্মকর্তারা প্রচুর অঙ্ক কষছেন, কিন্তু কাজের বেলায় লবডঙ্কা৷ শীতের দিনে ব্যাঙ যেমন ঘুমিয়ে থাকে, ঠিক সেইভাবে কর্মকর্তারা ঘুমোতে ভালোবাসেন৷
সেই ঘুমন্ত ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙলেই চিৎকার করে ওঠেন কোচ বদলাও৷ একের পর এক কোচ বদল করা হচ্ছে৷ কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের চরিত্র যে কে সেই৷ ভারতীয় দল এখন এশিয়া কাপ ফুটবলে খেলার জায়গা পায় না, তাহলে এদের কাছ থেকে কী আশা করা যেতে পরে!
সারিবদ্ধভাবে কোচের তালিকা তৈরি করা যায় তাহলে তাঁদের পাশে খোদাই হয়ে থাকবে ব্যর্থতা৷ আবার বড় গলায় বলা হয়েছিল ইন্ডিয়ান সুপার লিগ চালু হলে ভারতীয় ফুটবলে আধুনিকতা আসবে৷

football in Bengal

আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবলারদের সঙ্গে স্বদেশী ফুটবলাররা খেলতে পারলে ভারতীয় ফুটবলে প্রভূত উন্নতি হবে৷ হায় রে কত আগাম ভাবনা৷ যে দেশে ফুটবলাররা প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে পারেন না, তাঁদের কাছ থেকে কী পাওনা থাকতে পারে৷ ষাটের দশকে সোনালি দিনগুলি
কোনওভাবে ফিরে আসবে না— তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ অনেকে বলবেন খেলায় জোয়ার-ভাঁটা
থাকবে৷ মেনে নিলাম৷ কিন্তু ভাঁটা যদি নদীতে বইতে থাকে, সেই নদী তো শুকিযে কাঠ হয়ে যাবে৷ ভারতীয় ফুটবলে সেই অবস্থা হয়েছে৷ কাটমানি ফুটবলে কোনও উন্নতি হয় না৷ তাহলে সুনীল ছেত্রীকে চল্লিস বছর বয়সে ভারতীয় দলে ডেকে আনতে হয়!

যেসব বিদেশি কোচ এলেন, তাঁদেরযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই পারে! কে বা কারা তাঁদের নিয়োগ করলেন তার কৈফিয়ৎ দিতে হবে৷ ঝাঁ-চকচকে হোটেলে কোচ ও খেলোয়াড়দের রেখে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্ত খেলোযাড়দের দেখা নেই ভারতে যাঁরা আন্তর্জাতিক মঞ্চকে উজ্জ্বল করবেন৷

তবে মাঠের লড়াই থেকে তাঁরা ভারতকে এগিয়ে রাখতে পারছেন না। সেখানে ব্যর্থতার তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ৷ টাকা ছড়ালেও, কোনও রাজনৈতিক দলের মদতই আসল সার্টিফিকেট৷ গোল্লায় যাক ভারতের ফুটবল৷ গদি অলঙ্কৃত করতে পারলেই বুক চিতিয়ে হাঁটতে পারা যাবে ৷ তখন কোনও সংবিধান ও মাপকাঠি নিজের মতো করে তৈরি হয়ে যাবে৷ একটা সময়ে ভারতীয় দলে বাংলা থেকে পাঁচ থেকে আটজন ফুটবলারকে দেখতে পাওয়া যেত—কিন্তু এখন? সবে ধন নীলমণি হয়ে কোনও কোনও
খেলায় ভারতীয় দলে প্রদীপের সলতের মতন বাংলার কোনও ফুটবলারকে দেখতে পাওয়া যায়। যখনই পারফরমেন্স প্রয়োজন হয় না তখন দৈন্যদশা প্রকট হবে৷ এটাই স্বাভাবিক৷ সর্বস্তরে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে৷

ঘরোযা লিগ থেকে সন্তোষ ট্রফি, আই লিগ বা অন্য প্রতিযোগিতাগুলো গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছে। সেদিনই ভারতীয় ফুটবলে সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে৷ যেখানে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ
থাকে না, সেখানে পেশাদারিত্ব কথাটা উঠে গেছে৷ যেখানে দূরদর্শতিার অভাব থাকে—সেখানে ব্যর্থতা ছাড়া কোনও শব্দ ভারতীয় ফুটবলের জন্যে প্রযোজ্য হবে না৷ আন্তরিকতা ও দেশের সম্মানকে মর্যাদা না দিতে পারলে ভারতের এই ব্যর্থতা আরও ভয়ংকর রূপ নেবে ফুটবলে৷

হয়তো অনেকে বলতে চেষ্টা করবেন, ভারতীয় ফুটবল দলে স্বদেশী কোচকে এবারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং কাফা কাপে রোঞ্জ পদক এসেছে। তাহলে? ভাবনা ভালো! সামনে দিনগুলোর দিকে অপেক্ষায় থাকলাম।